নারী ও পুরুষের সালাত বা নামাজ আদায়ের সঠিক পদ্ধতি চিত্রসহ

সব কাজেরই নিয়ম - পদ্ধতি আছে । নিয়মমতাে কাজ করলে সুফল পাওয়া যায় । সালাত একটি বড় ইবাদত । সালাত আদায়েরও নিয়ম - পদ্ধতি আছে । মহানবি ( স:) নিজে সালাত আদায় করে সাহাবাদের হাতে - কলমে শিক্ষা দিয়েছেন । তিনি বলেছেন , ' আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ , তােমরাও সেভাবে সালাত আদায় করবে । ” মহানবি ( স: ) - এর শেখানাে নিয়মে সালাত আদায় করতে হবে ।


সালাতের সময় হলে আমরা পাক - পবিত্র হয়ে , পাকসাফ কাপড় পরব । তারপর পবিত্র জায়গায় কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াব । মনে করতে হবে আমি আল্লাহ পাকের সামনে দাড়িয়ে আছি , তিনি আমাকে দেখছেন । তিনি আমার অন্তরের খবরও রাখছেন ।

সঠিকভাবে নামাজের জন্য দাড়াতে হবে।

নামাজে দাড়ানোর সঠিক পদ্ধতি 


সালাতের নিয়ত করে আল্লাহু আকবর বলব । একে বলে তাকবিরে তাহরিমা ।
তাকবিরে তাহরিমা : হাত তোলার দৃশ্য 
তাকবিরের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেরা দুই হাত কান বরাবর ওঠাবে । এরপর দুই হাত নাতির ওপর বাঁধবে । মেয়েরা দুই হাত কাধ পর্যন্ত ওঠাবে । মেয়েরা হাত বাঁধবে বুকের ওপর ।

 হাত  বাঁধার নিয়ম :

বাম হাতের তালু নাভির ওপর রাখব । আর ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর রেখে কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা বাম হাতের কবজি ধরব । মাঝের ৩টি আঙুল বাম হাতের কবজির উপর বিছিয়ে রাখব । মেয়েরা শুধু বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে ।
হাত বাঁধার সঠিক পদ্ধতি 


এরপর সানা পড়ব । সানার বাংলা উচ্চারণ নিচে দেয়া হল ।

বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা , ওয়া তাআলা জাদুকা , ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ।

অর্থ : হে আল্লাহ ! আমি তােমারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তােমার জন্যই সকল প্রশংসা । তােমার নাম বরকত ও কল্যাণময় । তােমার সম্মান অতি উচ্চে । তুমি ছাড়া আর কোনাে মাবুদ নেই । '

এরপর আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ব । পরে সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য কোনাে সূরা বা তার অংশ পাঠ করব । তারপর আল্লাহু আকবর বলে রুকু করব । রুকুতে অন্তত তিনবার ‘ সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম ' পড়ব ।

রুকু করার নিয়ম :

রুকুতে দুই হাত দুই হাঁটুর উপর এমনভাবে রাখতে হবে যাতে মাথা , পিঠ ও কোমর এক বরাবর হয় । কনুই পাজর থেকে ফাক করে রাখতে হবে ।
রুকুর  সঠিক পদ্ধতি 

মেয়েরা বাম পায়ের টাখনু ডান পায়ের টাখনুর সাথে মিলিয়ে রাখবে । এরপর মাথা ঝুঁকিয়ে দুই হাতের আঙুলগুলাে মেলানাে অবস্থায় দুই হাঁটুর উপর রাখবে । কনুই পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং মাথা এতটুকু ঝুঁকাবে , যাতে হাঁটু পর্যন্ত পৌছে ।

এরপর ‘ সামিআল্লাহু লিমান হামিদা ’ বলে সােজা হয়ে দাঁড়াতে হবে । দাড়ানাে অবস্থায় “ রাব্বানা লাকাল হামদ ’ বলতে হবে । এরপর ‘ আল্লাহু আকবর ’ বলে সিজদাহ করতে হবে ।

সিজদাহ করার নিয়ম :

প্রথমে দুই হাঁটু মাটিতে বা জায়নামাজে রাখতে হবে । তারপর দুই হাত মাটিতে রাখতে হবে । তারপর দুই হাতের মাঝখানে মাথা রেখে নাক ও কপাল মাটিতে রাখতে হবে । সিজদাহর সময় দুই হাতের আঙুলগুলাে মিলিত অবস্থায় কিবলামুখী করে রাখতে হবে । দুই পায়ের আঙুলগুলাে কিবলামুখী করে মাটিতে লাগিয়ে রাখতে হবে । উভয় পা মিলিত অবস্থায় খাড়া থাকবে ।
সিজদাহ করার সঠিক পদ্ধতি 
মেয়েরা পা খাড়া রাখবে না । উভয় পা ডান দিকে বের করে দেবে এবং মাটিতে বিছিয়ে রাখবে । ছেলেরা সিজদার সময় মাথা হাঁটু হতে দূরে রাখবে । হাতের কবজির উপরের অংশ মাটিতে লাগাবে না । পায়ের নলা উরু হতে পৃথক রাখবে । মেয়েরা সর্বাঙ্গ মিলিত অবস্থায় সিজদাহ করবে । মাথা যথাসম্ভব হাঁটুর কাছে রাখবে । উরু পায়ের নলার সাথে এবং হাতের বাজু পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে । সিজদাহয় অন্তত তিনবার ‘ সুবহানা রাব্বিয়াল আলা ' বলতে হয় ।


এরপর আল্লাহু আকবর বলে সােজা হয়ে । বসে দুই হাত হাঁটুর ওপর রাখবে । তারপর আল্লাহু আকবর বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করবে এবং পূর্বের মতাে তসবি পড়বে । এরপর ‘ আল্লাহু আকবর ' বলে সােজা হয়ে দাঁড়াতে হবে । এভাবে প্রথম রাকআত শেষ হবে । এরপর দ্বিতীয় রাকআত শুরু হবে । দ্বিতীয় রাকআতেও প্রথম রাকআতের মতাে যথারীতি সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পড়ে রুকু , সিজদাহ করে সােজা হয়ে বসতে হবে । তাশাহহুদ , দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে ডানে ও বামে মুখ ফিরিয়ে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ’ বলতে হবে । এভাবে দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত শেষ হবে ।

তাশাহহুদ পড়ার সঠিক পদ্ধতি 
তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত হলে তাশাহহুদ অর্থাৎ আবদুহু ওয়া রাসুলুহু পর্যন্ত পড়ে ‘ আল্লাহ আকবর ' বলে দাঁড়াতে হবে । এরপর পূর্বের মতাে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআত শেষ করতে হবে ।

ওয়াজিব , সুন্নত ও নফল সালাত হলে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাহিতার সঙ্গে অন্য সূরা পড়তে হবে । কিন্তু ফরজ হলে অন্য সূরা মেলাতে হবে না । এভাবে যথারীতি তাশাহহুদ , দরুদ , দোয়া মাসুরা পড়ে প্রথমে ডানে এবং পরে বামে মুখ ফিরিয়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করতে হবে ।
সালাম ফেরানাের সঠিক পদ্ধতি

Post a Comment

0 Comments